একাকী ইচ্ছেগাওঁ রামধুরার পথে লিখেছেন দীপাঞ্জন কর
আমার পথচলা শুরু কলকাতা থেকে ।অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল একটা সোলো ট্রিপে বেরোবো।বন্ধুদের সাথে বেড়িয়েছি আগেও ,তার মজা একরকম ,কিন্তু এই বিশ্বকে খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করার জন্য কখনো কখনো একা বেরিয়ে পড়া প্রয়োজন। ইট কাঠের শহর ছেড়ে একটু দূরে সহজ সরল মানুষের মাঝে,যারা বেঁচে আছেন প্রকৃতিকে সঙ্গী করে। সমুদ্রে আগে গেছি ভালোও লেগেছে কিন্তু এবার মনে হলো যাই একটু পাহাড়ি গ্রাম ঘুরে আসি।সঙ্গী আমার ব্যাকপ্যাক।বাড়িতে একা যাচ্ছি শুনলে বাধা দিতে পারে তাই কিছু ভার্চুয়াল বন্ধুর নাম বলে বেরিয়ে পড়লাম অজানা পথের সন্ধানে।বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই পরিকল্পনা করছিলাম তাই হোমস্টের সাথে যোগাযোগের চেষ্টায় ছিলাম।একা মানুষ একটা রুম পাওয়া সমস্যার কিন্তু হাল ছাড়িনি। ইছেগাঁও তে দুদিন কনফার্মেশন পেলাম আর রামধুরার(স্থানীয় মানুষ যাকে bermik ডাকে ) জন্য আরো দুদিন,900-1000 দিনপ্রতি মাথাপিছু থাকা খাওয়ার চুক্তিতে ।ট্রেনে তৎকালে টিকিট না পেয়ে redbus এর app থেকে শ্যামলী পরিবহনের ভলভো বাসে টিকিট বুক করে ফেললাম 1 দিন আগে। সময়টা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। সন্ধে 7.30 এ বাস ছাড়লো।এয়ারপোর্ট কে পাস কাটিয়ে বাস ছুটলো কৃষ্ণনগর হয়ে নিউ জলপাইগুড়ির পথে।ফারাক্কাতে ব্রিজের কাজ চলার কারনে বাঁধা পেয়েছি কিন্তু বাসের কর্মীদের জন্য কখনোই ক্লান্তি গ্রাস করেনি।
ইছেগাঁও বা রামধুরা দুটোই আমাদের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত ।কালিমপঙ শহর থেকে মাত্র 17 কিলোমিটার দূরে। তাই নিউ জলপাইগুড়ি নেমে আমার গন্তব্য কালিমপঙ। রিজার্ভ গাড়ি ভাড়া 2500 টাকা ,shared গাড়ির ও ব্যবস্থা আছে । তার জন্য টোটো বা অটো তে তেনজিং নোরগে বাস স্ট্যান্ড,বুকিং অফিস থেকে 150 টাকা মাথাপিছু খরচ কালিমপঙ যেতে।এছাড়া বাসের ও সুবিধা আছে।
করোনেশন ব্রিজ পেরিয়ে গাড়ি ছুটে চললো কালিমপঙ এর দিকে। ধীরে ধীরে অনুভব করলাম পাহাড়ি নদী আর শীতের আমেজ আমাকে জড়িয়ে ধরছে।কালিম্পঙে নামার পর একটা জ্যাকেট বার করে পরে নিলাম। একা মানুষ তাই নিজের খেয়াল নিজেই রাখতে হয়।আগে থেকে বলা ছিল তাই হোমস্টে থেকে ওরাই গাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। ড্রাইভার ভদ্রলোক আমারই বয়সি তাই শুরুতেই বন্ধুত্ব হয়ে গেল ।আমাকে যাওয়ার পথে ভিউ পয়েন্ট গুলো দেখতে দেখতে নিয়ে গেল।আসতে আসতে সন্ধে নেমে আসছে ,এমন সময় একটা বাঁক ঘুরতেই সামনে ভেসে উঠলো মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা।বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শৃঙ্গ।শেষে পৌঁছলাম লক্ষনজি র বাড়ি।পৌঁছনোমাত্র পেয়ে গেলাম গরম গরম পাকোড়া আর লেবু চা।ওনাদের অমায়িক ব্যাবহার আর থাকার ঘর দুটোই বেশ স্বস্তি দিলো। কারণ আমার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি একটু বাতিক আছে,ওটা নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলাম।একটুপর অন্ধকার নেমে এলো।ব্যালকনির সামনে থেকেই শুরু হওয়া ভ্যালির দূর দুরান্তে থাকা ঘরগুলিতে তারার মতো আলো জ্বলে উঠলো। মন্ত্র মুঘদের মতো উপভোগ করতে থাকলাম । হোম স্টের পিছনেই শুরু হয়েছে ইচ্ছে ফরেস্ট। নানা রকম পাখির ডাক আর হিমেল ঠান্ডা হওয়া সমস্ত ক্লান্তি আর অফিসের দুশ্চিন্তা দূর করে দিলো । একটু পরেই রাতের ডিনার এসে গেল।গরম রুটি ,সবজি আর চিকেন। এবার ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম।
পরেরদিন সকালটা শুরু হলো পাখির ডাকে । বাইরে বেরিয়ে দেখি মনোরম আবহাওয়া।কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন অপেক্ষা করে আছে তার সুন্দর রূপ নিয়ে । প্রাণ ভরে দেখতে থাকলাম আর কিছু মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দি করলাম,সারাজীবনের সঞ্চয় হিসাবে।খোঁজ নিয়ে জানলাম সিলারিগাঁও খুব কাছেই ,ট্রেক করে যাওয়া যায়। সকালে ব্রেকফাস্ট সেরেই একজন গাইড নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ট্রেকিংয়ে,ইছেগাঁও থেকে সিলারিগাঁও।আঁকা বাঁকা জঙ্গলের পথে।বয়স্করা হয়তো পারবেন না কিন্তু এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা।কখনো এলাচ গাছের ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে আবার কখনো নাম না জানা ফুলের দঙ্গল পেরিয়ে।প্রায় 30 মিনিট লাগলো সিলারিগাঁও পৌঁছতে,পৌঁছে একটু বিশ্রাম।সিলারিগাঁও আরেকটি সুন্দর পাহাড়িগ্রাম ,বহু মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। ভিউ পয়েন্টটা ভারী চমৎকার।এবার ফেরার পালা।দেখতে দেখতে দিনটা কেটে গেল আর দিয়ে গেল অনেক স্মৃতি।
পরের দিন বেরিয়ে পড়লাম রামধুরা জন্য।পায়ে হেঁটে মিনিট ত্রিশেক সময় লাগলো।পাহাড়ি পাকা রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম ,পথে হালকা বৃষ্টিও পেলাম।আজ উঠবো রামুজির বাড়িতে।উনি আমায় দারুন একটা ঘর দিলেন যার জানলা দিয়ে সর্বদা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় ।এখান থেকে তিস্তা নদী ,সিকিম মনিপাল ইউনিভার্সিটি,দার্জিলিং সব পরিষ্কার দেখা যায়। গৃহকর্তা রামুজির মতো ওনার ছোট ছেলে আশু ও খুবই ভালো আর অমায়িক । ও নিজেই আমায় ঘুরিয়ে দেখালো আশেপাশের ভিউ পয়েন্ট গুলো। দুটো দিন দেখতে দেখতে কেটে গেল।এই স্মৃতি গুলো সারা জীবন থেকে যাবে।ফেরার সময় একটা শেয়ার গাড়িতে সকাল 9.30 নাগাদ কালিমপঙ পৌঁছলাম।সেখান থেকে শেয়ার গাড়িতে শিলিগুড়ি।শিলিগুড়ি পৌঁছে কিছু কেনাকাটা সারলাম বাড়ির জন্য। শ্যামলী পরিবহনের টিকিট কাটাই ছিল। পরের দিন সকালে কোলকাতা পৌঁছলাম একরাশ স্মৃতি আর পিছুটান নিয়ে।
ইছেগাঁও বা রামধুরা দুটোই আমাদের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত ।কালিমপঙ শহর থেকে মাত্র 17 কিলোমিটার দূরে। তাই নিউ জলপাইগুড়ি নেমে আমার গন্তব্য কালিমপঙ। রিজার্ভ গাড়ি ভাড়া 2500 টাকা ,shared গাড়ির ও ব্যবস্থা আছে । তার জন্য টোটো বা অটো তে তেনজিং নোরগে বাস স্ট্যান্ড,বুকিং অফিস থেকে 150 টাকা মাথাপিছু খরচ কালিমপঙ যেতে।এছাড়া বাসের ও সুবিধা আছে।
করোনেশন ব্রিজ পেরিয়ে গাড়ি ছুটে চললো কালিমপঙ এর দিকে। ধীরে ধীরে অনুভব করলাম পাহাড়ি নদী আর শীতের আমেজ আমাকে জড়িয়ে ধরছে।কালিম্পঙে নামার পর একটা জ্যাকেট বার করে পরে নিলাম। একা মানুষ তাই নিজের খেয়াল নিজেই রাখতে হয়।আগে থেকে বলা ছিল তাই হোমস্টে থেকে ওরাই গাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। ড্রাইভার ভদ্রলোক আমারই বয়সি তাই শুরুতেই বন্ধুত্ব হয়ে গেল ।আমাকে যাওয়ার পথে ভিউ পয়েন্ট গুলো দেখতে দেখতে নিয়ে গেল।আসতে আসতে সন্ধে নেমে আসছে ,এমন সময় একটা বাঁক ঘুরতেই সামনে ভেসে উঠলো মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা।বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শৃঙ্গ।শেষে পৌঁছলাম লক্ষনজি র বাড়ি।পৌঁছনোমাত্র পেয়ে গেলাম গরম গরম পাকোড়া আর লেবু চা।ওনাদের অমায়িক ব্যাবহার আর থাকার ঘর দুটোই বেশ স্বস্তি দিলো। কারণ আমার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি একটু বাতিক আছে,ওটা নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলাম।একটুপর অন্ধকার নেমে এলো।ব্যালকনির সামনে থেকেই শুরু হওয়া ভ্যালির দূর দুরান্তে থাকা ঘরগুলিতে তারার মতো আলো জ্বলে উঠলো। মন্ত্র মুঘদের মতো উপভোগ করতে থাকলাম । হোম স্টের পিছনেই শুরু হয়েছে ইচ্ছে ফরেস্ট। নানা রকম পাখির ডাক আর হিমেল ঠান্ডা হওয়া সমস্ত ক্লান্তি আর অফিসের দুশ্চিন্তা দূর করে দিলো । একটু পরেই রাতের ডিনার এসে গেল।গরম রুটি ,সবজি আর চিকেন। এবার ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম।
পরেরদিন সকালটা শুরু হলো পাখির ডাকে । বাইরে বেরিয়ে দেখি মনোরম আবহাওয়া।কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন অপেক্ষা করে আছে তার সুন্দর রূপ নিয়ে । প্রাণ ভরে দেখতে থাকলাম আর কিছু মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দি করলাম,সারাজীবনের সঞ্চয় হিসাবে।খোঁজ নিয়ে জানলাম সিলারিগাঁও খুব কাছেই ,ট্রেক করে যাওয়া যায়। সকালে ব্রেকফাস্ট সেরেই একজন গাইড নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ট্রেকিংয়ে,ইছেগাঁও থেকে সিলারিগাঁও।আঁকা বাঁকা জঙ্গলের পথে।বয়স্করা হয়তো পারবেন না কিন্তু এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা।কখনো এলাচ গাছের ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে আবার কখনো নাম না জানা ফুলের দঙ্গল পেরিয়ে।প্রায় 30 মিনিট লাগলো সিলারিগাঁও পৌঁছতে,পৌঁছে একটু বিশ্রাম।সিলারিগাঁও আরেকটি সুন্দর পাহাড়িগ্রাম ,বহু মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। ভিউ পয়েন্টটা ভারী চমৎকার।এবার ফেরার পালা।দেখতে দেখতে দিনটা কেটে গেল আর দিয়ে গেল অনেক স্মৃতি।
পরের দিন বেরিয়ে পড়লাম রামধুরা জন্য।পায়ে হেঁটে মিনিট ত্রিশেক সময় লাগলো।পাহাড়ি পাকা রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম ,পথে হালকা বৃষ্টিও পেলাম।আজ উঠবো রামুজির বাড়িতে।উনি আমায় দারুন একটা ঘর দিলেন যার জানলা দিয়ে সর্বদা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় ।এখান থেকে তিস্তা নদী ,সিকিম মনিপাল ইউনিভার্সিটি,দার্জিলিং সব পরিষ্কার দেখা যায়। গৃহকর্তা রামুজির মতো ওনার ছোট ছেলে আশু ও খুবই ভালো আর অমায়িক । ও নিজেই আমায় ঘুরিয়ে দেখালো আশেপাশের ভিউ পয়েন্ট গুলো। দুটো দিন দেখতে দেখতে কেটে গেল।এই স্মৃতি গুলো সারা জীবন থেকে যাবে।ফেরার সময় একটা শেয়ার গাড়িতে সকাল 9.30 নাগাদ কালিমপঙ পৌঁছলাম।সেখান থেকে শেয়ার গাড়িতে শিলিগুড়ি।শিলিগুড়ি পৌঁছে কিছু কেনাকাটা সারলাম বাড়ির জন্য। শ্যামলী পরিবহনের টিকিট কাটাই ছিল। পরের দিন সকালে কোলকাতা পৌঁছলাম একরাশ স্মৃতি আর পিছুটান নিয়ে।
No comments