পুরুলিয়া পায়ে পায়ে -কলম ধরেছেন অর্পিতা দাস
গত ৮ই জানুয়ারি যাত্রা শুরু হাওড়া থেকে হাওড়া-রাঁচি ট্রাই উইকলি ট্রেন এ।তখন দুপুর ১.৩০। গন্তব্য ছিল বিষ্ণুপুর। পরের দিন rpf পরীক্ষা দিয়ে বিষ্ণুপুর ঘুরে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। বাঁধ সারলো বাংলা বন্ধ। ট্রেন তখন খড়গপুর থেকে কিছুটা আগে ফোনে ম্যাসেজ ঢুকলো পরীক্ষা ক্যান্সেল। সঙ্গে বাবা মা দুজনেই ছিল তাই ঠিক হলো পুরুলিয়া ঘুরে আসা হবে। টিকিট ছিল বিষ্ণুপুর পর্যন্ত তাই নেমে পড়লাম বিকাল ৪টের পরেই। নেমে একটু হেটেই টোটো স্ট্রান্ড। দরাদরি করে ৩০০ টাকায় বিষ্ণুপুরের সব মন্দির ঘোরাবে ঠিক হলো। কিন্তু এর মধ্যে ৩টে মন্দির ৫টায় বন্ধ হয়ে যায় তাই আগে যাওয়া হলো রাসমঞ্চতে। সেখানে মাথাপিছু ২৫ টাকায় টিকিট কাটা হলো। এই টিকেটে ৩টে মন্দির ঘোরা যাবে - রাসমঞ্চ, শ্যমরাই মন্দির আর জোড়বাংলা। এগুলো ছাড়াও মল্ল রাজার তৈরি সদর গেট ,লালজি মন্দির, দুর্গা মন্দির, মদন মোহন, ছিন্নমস্তা আরো কয়েকটা মন্দির ঘুরে দেখে স্টেশনে নামিয়ে দিল টোটোকাকু ৬.৩০ নাগাদ। 7টা নাগাদ আদ্রা যাওয়ার ট্রেন পেলাম ঘন্টা দুই সময় লাগলো।প্রায় রাত ৯.৩০ নাগাদ স্টেশনে নেমে গেলাম আদ্রা enquiry office এ, retiring room পাওয়া না গেলেও dormatory room পাওয়া যায় যেখানে আমরা রাত কাটাব স্থির করলাম। স্টেশনের বাইরে হোটেল থেকে খাওয়াদাওয়া সেরে ঢুকে পড়লাম রুমে। পরের দিন ৯ই জানুয়ারি সকাল সকাল প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়লাম জয়চন্ডী পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। স্টেশনের বাইরে থেকে টোটো বুকিং করলে ১৫০ টাকা নেবে আর যদি কষ্ট করে কিছুদূর হেটে যাওয়া যায় তো অটো পাওয়া যায়, স্থানীয় মানুষ যাতায়াত করে ১০ টাকায় জয়চন্ডী পৌঁছে যাওয়া যায়। অটো থেকে নেমে মিনিট ১০ হাঁটা পথ। পাহাড়ের নীচে বিশাল পার্কিং এর জায়গা, অনেকে পিকনিক করতেও যায়। ওপরে জয়চন্ডী মা আর বজরংবালির মন্দির ছাড়াও অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আছে। কিছু স্থানীয় মানুষ ওখানে বিভিন্ন চাট বিক্রি করে পারলে তাদের থেকে কিছু কিনবেন। মন্দিরে পুজো দেওয়ার সুবন্দোবস্ত রয়েছে। ফিরে এসে হার কাঁপানো ঠান্ডা জলে স্নান সেরে ও দুপুরের খাওয়াদাওয়া করে বেরিয়ে পড়লাম ১টা নাগাদ পুরুলিয়ার উদ্দেশ্যে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে পুরুলিয়া পৌঁছে গেলাম। স্টেশনের বাইরে টোটো স্ট্রান্ড থেকে হোটেলের খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম। ভদ্রলোক সাধারণ একটা হোটেল এ নিয়ে গেল নাম হোটেল হেরিটেজ, বাস স্ট্র্যান্ডের একদম কাছেই। ব্যাগ রেখে বেরিয়ে পড়লাম ৪টে নাগাদ পুরুলিয়া দর্শনে। সায়েন্স সেন্টার , পার্ক,ছোট চিড়িয়াখানা , কয়েকটা মন্দির দর্শন করে হোটেলে ফিরলাম 6টার পরে। এর পর চা পান করে বাবার সাথে বেরিয়ে পড়লাম বাস স্ট্র্যান্ডে খোঁজ করতে অযোধ্যা যাওয়ার জন্য। কয়েকজনের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম পরের দিন বাড়ি ফিরতে হলে আমাদের প্রাইভেট গাড়ির ব্যাবস্থা করতে হবে। আমরা ৩জন ছিলাম তাই ছোটো গাড়ি বলতে অ্যাম্বাসেডর ছাড়া আর কিছু নেই। এখানেও একটু দরাদরি করতে হলো, শেষ ১৭৫০ টাকায় স্থির হলো। পরের দিন ১০ই জানুয়ারি সকাল ৮.৩০ টায় যাত্রা শুরু হলো। কাছাকাছি পাহাড় এর স্বাদ তো পাওয়া গেলো সাথে বাড়তি ওখানের গ্রাম্য পরিবেশ এর স্বাদ। আমার প্রথমবার পাহাড়ে নয় তাই আমার অতটা উত্তেজক না লাগলেও মা বাবার মুখের দিকে চেয়ে বুঝেছিলাম তারা বেশ ভালোই মজা নিচ্ছে। পাহাড়ি পথে পড়বে ময়ূর হিলস ,বামনী ফলস ,লোয়ার ড্যাম,আপার ড্যাম । রাস্তায় ফেরার সময় দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে স্টেশনে নামলাম তখন ২.৩০ টে ঘড়িতে। দুপুর ৩ টের রূপসী বাংলায় বসে একটা গোটা গল্পের বই হজম করে নিলাম। ব্যাস তারপর আর কি একরাশ স্মৃতি নিয়ে বাড়ি।
তিনজনের মোট খরচ
হাওড়া রাঁচি ট্রাই উইকলি এক্সপ্রেস (০৮৬২৭) : ১০০*৩=৩০০ টাকা
বিষ্ণুপুর ট্যুর : ৩০০ টাকা
বিষ্ণুপুর তো আদ্রা জংশন : ২৫*৩=৭৫ টাকা
ডরমেটরি রুম : ৫০*৩ = ১৫০ টাকা
জয়চন্ডী পাহাড় : ১০*৩ =৩০ টাকা
আদ্রা তো পুরুলিয়া : ২৫*৩ = ৭৫ টাকা
পুরুলিয়াতে হোটেল : ৬৫০ টাকা
অযোধ্যা তে গাড়িভাড়া : ১৭৫০ টাকা
ফেরা রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস (১২৮৮৪) : ১৪৫*৩ =৪৩৫ টাকা
বিষ্ণুপুর ট্যুর : ৩০০ টাকা
বিষ্ণুপুর তো আদ্রা জংশন : ২৫*৩=৭৫ টাকা
ডরমেটরি রুম : ৫০*৩ = ১৫০ টাকা
জয়চন্ডী পাহাড় : ১০*৩ =৩০ টাকা
আদ্রা তো পুরুলিয়া : ২৫*৩ = ৭৫ টাকা
পুরুলিয়াতে হোটেল : ৬৫০ টাকা
অযোধ্যা তে গাড়িভাড়া : ১৭৫০ টাকা
ফেরা রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস (১২৮৮৪) : ১৪৫*৩ =৪৩৫ টাকা
Ambassador phone no.- 8101010923( Ravi)
Bishnupur toto no. - 9732377294/9064666484( Biman)
মুঠোফোনে ধরে রাখা মুহূর্তগুলো
যদি হাতে সময় নিয়ে যান তাহলেও আমি বলবো বাস এ করে অযোধ্যা যাওয়ার দুঃসাহস দেখাবেননা। কারণ বাস যায় হিল টপ পর্যন্ত সেখান থেকে পাহাড় ঘুরে দেখতে গেলে আপনাকে গাড়ি বুক করতে হবে আর তার খরচ পড়বে ১৮০০আর নাহলে পায়ে হেটে ঘুরতে হবে। তাই ঝুটঝামেলা পোহাতে না চাইলে বাস স্ট্রান্ড থেকেই গাড়ি বুক করে নিন একটু দরাদরি করে। আর সঙ্গে লজেন্স রাখুন পাহাড়ে হেটে ওঠানামা করার সময় মুখে রাখবেন কষ্ট কম হবে।
No comments