Takdah- A Beautiful Village Near Derjeeling written by Arijit Guha
গাড়িটা সেবক রোডে এসে পড়তেই শহরের কোলাহল দূরে চলে গেল।দৃশ্যপট আস্তে আস্তে বদলাচ্ছে।দুদিকে বড় বড় শাল গাছের জঙ্গল, তার মাঝখান দিয়ে ছবির মত রাস্তা উঠে গেছে পাহাড়ের ওপর।এই রাস্তা দিয়ে আগে যতবার গেছি ততবারই আমার ভীষণ ভাবে সমরেশ মজুমদারকে মনে পড়েছে।স্বর্গছেড়া চা বাগান তো কাল্ট ফিগার হয়ে গেছে, কিন্তু ছোটবেলায় পড়া অর্জুনকে খুঁজে বেড়াই খালি খালি এইসব জায়গাগুলোতে।গাড়িতে মাঝে মাঝে বেজে উঠছে নেপালি গান।ড্রাইভার আমৃতকে বললাম আমাদের খুব প্রিয় গান রেশম ফিরিরি চালাতে, বলল ‘পেন ড্রাইভে গান চলছে, পর পর আছে, একটু পরেই বাজবে’।সব নেপালি গানের মধ্যেই জানি না এমন মাদকতা আছে কিনা, তবে গানগুলো চলার সময় মনে হচ্ছে যেন পাহাড় ডাকছে আমাদের আয় আয় আয় করে।একটু পরেই তিস্তার ওপর বিখ্যাত করোনেশন ব্রিজের জ্যামে ফাঁসলাম।তবে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না।এই জ্যামটা হয় ডানদিকে জলপাইগুড়িতে যে রেল লাইনটা গেছে সেই রেল ক্রসিং এর জন্য।ওই রেল লাইনেই অনেক হাতি কাটা পরে।দেখলাম লাইনটা পুরো চলে গেছে ঘন জঙ্গলের ভেতর।হাতিদের আর কি দোষ! আমরা মানুষরাই ওদের জগতে অনধিকার প্রবেশ করেছি, আবার ওদের রেল লাইনে কেটেও ফেলছি।
তিস্তাকে একপাশে রেখে পাহাড়ী রাস্তা শুরু হল।সমতলেই আকাশের মুখ ভার ছিল।রাস্তায় বৃষ্টি কোথাও পাইনি, তবে যত ওপরে উঠতে শুরু করলাম মেঘ আমাদের পিছু নিল।পাহাড়ী রাস্তা এঁকেবেঁকে উঠছে আর মেঘ ভিড় করে আসছে।কত কাছে চলে এসেছে।যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে এরকম, তবে ধরা কিছুতেই দেবে না।একটু পর থেকেই শুরু হল চা বাগান।পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে চা বাগান ওপর থেকে নীচে নেমে চলে গেছে ঢেউয়ের মত করে।ঝুম চাষ এই ভাবেই হয় যাতে বৃষ্টির জল কোথাও দাঁড়িয়ে না থাকতে পারে।জল দাঁড়িয়ে গেলেই চা গাছের পাতা পচে যায়।পিঠে বড় ঝুড়ি ব্যাগের মত করে নিয়ে মহিলারা চা পাতা তুলছে,আর আমাদের গাড়ির দিকে চোখ পড়লেই হাত নেড়ে টাটা করছে।আমরাও টাটা করে এগিয়ে যাচ্ছি।সবার মুখে হাসি।দেখে মনেই হবে না যে চা বাগানের শ্রমিকরা কত অমানুষিক কষ্টের মধ্যে আছে।হাসিটা যেন পাহাড়ীরা খুব সহজ ভাবে রপ্ত করে নিয়েছে।দেখতে দেখতে শুরু হল রেশম ফিরিরি গান, এটার ব্যাপারে আমার আগের একটা লেখায় উল্লেখ করেছিলাম আর তার সাথে সাথেই হুড়মুড়িয়ে মেঘ ঢুকে পড়ল আমাদের গাড়ির ভেতরে।এতক্ষণ মেঘ ওপরে ছিল আমরা ছিলাম নীচে, এবার থেকে আমাদের সাথে একসাথে মেঘের পথচলা।এই পথ চলা ছিল সারাক্ষণ, কখনো কম কখনো বেশি যতক্ষণ অব্দি না আবার নিচে নেমে এসেছি।মেঘ যেখানে ভারী সেখানে টুপটুপিয়ে বৃষ্টি আবার মেঘ যেখানে হাল্কা সেখানে রাস্তা শুকনো।পুরো পথটা ধরে চলল এই মেঘ বৃষ্টির খেলা।
প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টা পর এসে পৌঁছলাম তাকদা বাজারে।এতক্ষণ অবশ্য এনজেপি থেকে লাগে না।আমাদের খাওয়ার জন্য প্রায় দেড় ঘন্টা সময় নষ্ট হয়েছিল বলে এতক্ষণ লেগেছিল।তাকদা বাজার নামেই বাজার।দোকান মোটামুটি হাতে গুনে সাত থেকে আটটা।তার সাথে একটা ওয়েস্ট বেংগল ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ডের অফিস।খুবই নির্জন জায়গা।লোকজনও সেরকম কিছু চোখে পড়ল না।বাজার থেকে একটু এগিয়ে একটা খাড়াই ধরে উঠে যেতে হবে আমাদের থাকার জায়গায় যাওয়ার জন্য।হোটেল নয়, থাকার জায়গা, কারণ তাকদা তে কোন হোটেল নেই।জায়গাটার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য ওখানে কোন হোটেল খোলার পার্মিশন দেওয়া হয়না।যা আছে সবই হোম স্টে।মানে যারা ওখানে থাকে তারাই তাদের নিজেদের অতিরিক্ত ঘরগুলো ছেড়ে দেয় টুরিস্টদের জন্য।আমরা গিয়ে উঠলাম একটা হেরিটেজ বাংলোতে।ব্রিটিশ আমলের তৈরি কাঠের বাংলো।সামনে একটা ফুলের বাগান।ফুলের বাগান পেড়িয়ে মেঘ কুয়াশায় মাখামাখি হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।বাংলোর বর্তমান মালিক সুশীল প্রধান আমাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।বাগানের ডানদিকে দুটো বড় ঘর,আর বারান্দা লাগোয়া তিনটে ঘর,তার মধ্যে একটাতে সুশীল প্রধান নিজেই থাকেন তার পরিবার নিয়ে আর একদম কোণায় একটা ঘর আছে সেটা হচ্ছে ওনাদের ঠাকুর ঘর।পরে উঁকি মেরে দেখেছিলাম বুদ্ধদেবের একটা বড় মুর্তি রয়েছে ঘরটায়।বারান্দায় দেখলাম এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা বসে রয়েছেন কাঠের চেয়ারে আর তার পাশে টেবিলে একটা শঙ্কু সমগ্র আর একটা বাঁটুল দি গ্রেট পরে রয়েছে।বুঝলাম বাঙালি।তারপরেই একটা বাচ্চা ছেলে এসে ওর ঠাকুমার সামনে থেকে বই দুটো নিয়ে গেল।সুশীলজি বললেন আপনারা আগে খেয়ে নিন,অনেক বেলা হয়ে গেছে,তারপর ফ্রেশ হবেন।ঠিকই বলেছিলেন উনি।কারন তখন ঘড়ির কাঁটা প্রায় চারটে ছুঁই ছুঁই।খাবার এলো গরম ভাত তার সাথে লম্বা লম্বা ঠিক ঝুরি আলু ভাজা নয়,তার থেকে একটু মোটা আলু ভাজা করকরে করে ভাজা, একটা স্থানীয় শাক,ডাল মূলোর একটা তরকারী একদম শুকনো আর ডিমের ঝোল।ক্ষিদের মুখে যেন অমৃত লাগল।খেয়ে দেয়ে এক এক করে সবাই স্নান করতে ঢুকে গেল।যদিও বাড়ি,কিন্তু ব্যবস্থা সব হোটেলের মতই।প্রত্যেকটা ঘরে আলাদা বাথরুম,বাথরুমে গিজার সব কিছুই রয়েছে।গরম জলে স্নান করার পর অনেক ফ্রেশ লাগল।নিমেষে যেন ক্লান্তি দূর হয়ে গেল।স্নান করে বাগান বা লন যাই বলা হোক না কেন সেখানে এসে বসলাম।দূরে পাহাড়ের মাথা দেখা যাচ্ছে।একদম বাঁদিকে একটা খাড়াই পাহাড়,সেখানে কোন বসতি নেই।ওই পাহাড়টা না থাকলে নাকি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যেত।তার থেকে আরেকটু বাঁদিকে অনেকটা দূরে পাহাড়ের মাথায় কালিম্পং রয়েছে।এগুলো অবশ্য কোনোটাই তখন দেখা যাচ্ছিল না।আমাদের সামনে শুধু মেঘ ঘুরে বেরাচ্ছে।কথা বললে মুখ দিয়ে ধোয়ায় বেরোচ্ছে।কথায় কথায় সুশীল প্রধান জানালেন এই বাংলোটা ওনার শ্বশুর মশাই ১৯৮০ সালে গীতা মুখার্জি নামে এক বাঙালী মহিলার থেকে দশ লাখ টাকা দিয়ে কেনেন।এর সাথেই পিছনে একটা মনাষ্ট্রিও কেনেন উনি।পরদিন সকালে আরেকটু চড়াই ভেঙে মনাষ্ট্রিটাও দেখে এসেছিলাম।শ্বশুর মশাই এখনো বেঁচে আছেন।একটু পরই দেখলাম উনি বাইরে বেরিয়ে এলেন।বয়সের লেশমাত্র নেই।টুকটুক করে বারান্দা ধরে ঘুরে বেরাচ্ছেন।মনে হল ইভিনিং ওয়াক করছেন।কারো ঘরের দরজা খোলা দেখলেই বন্ধ করে দিচ্ছেন ।বলছেন দরজা খোলা রাখলে মেঘ ঢুকে জামাকাপড় তো স্যাতস্যাতে করে দেবেই তার সাথে পোকাও ঢুকে যাবে। সন্ধ্যে নেমে আসছে আস্তে আস্তে।চারিদিক অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।মেঘও কাটতে শুরু করেছে।দূরে পাহাড়ে একটা একটা করে আলো জ্বলে উঠছে জোনাকির মত করে।ডানদিকে তাকিয়ে দেখলাম একটা ভ্যালি মত আছে তার গা দিয়ে সরু রাস্তা উঠে এসেছে।রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি চলে গেল,তার হেডলাইটের আলো মিলিয়ে যেতে যেতেই পুরোপুরি অন্ধকার নেমে এলো।আর বাইরে বসে থাকা যাচ্ছা না।একটু শীত শীত করছে।মোবাইলে গুগল চেক করে দেখলাম তাপমাত্রা দেখাচ্ছে ১৬ ডিগ্রি।জমে যাওয়ার মত ঠান্ডা নয়,তবে ওই মেঘ কুয়াশার জন্যই যেন একটু ভেজা ভেজা ঠান্ডা লাগছে।এক এক করে উঠে গেলাম সবাই বারান্দায়।ফাই ফর্মাশ খাটার মিষ্টি মুখের ছেলেটার নাম প্রকাশ।এর সাথে কথা বললেও দেখলাম সবসময় মুখে হাসি নিয়ে কথা বলছে।ওকে ম্যানেজ করে বারান্দায় আরো প্রায় দশটা চেয়ার আনানো হল।বসেছিলাম একদম বারান্দার মুখটাতেই,সেখান থেকে সামনে তাকালেই দূরের পাহাড়ের আলো দেখা যাচ্ছে।সবাই মিলে ঠিক করলাম বারান্দায় বসেই আসর জমাব।মানে বারান্দায় বসেই পানাহার করব আর কি।সেই মতই ওখানে শুরু করে দিলাম আর তার সাথে পরের দিনের লামাহাটা লেপচাজগত এইসব জায়গায় যাওয়ার প্ল্যান ছকা হতে শুরু করল।
পরদিন ঘুম ভাঙল একটু বেলার দিকেই।প্রায় সাড়ে আটটা নাগাদ।যদিও কলকাতার সময় অনুযায়ী এটা বেলা নয়,সকালই বলা যায়,কিন্তু যস্মিন দেশে যদাচার।পাহাড়ে এটা বেশ বেলাই বলা চলে,কারন ওখানে কেউই আটটা নটার পর জেগে থাকে না।আমাদের মত আসর বসিয়ে বারোটা একটায় ঘুমাতে যাওয়ার কথা তো কেউ সুদুর কল্পনাতেও স্থান দেয় না।ঘুম ভেঙে দেখি অঝোর ধারায় বৃষ্টি পরে চলেছে।চারিদিক কালো করে রয়েছে।বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।মনে হচ্ছে আরো ঘুমিয়ে নিই।এদিকে আবার বেরনোর কথা আজকে।ভাবছিলাম হয়ত ঘরে বসেই আজকের দিনটা কাটাতে হবে।তাই মুখ ধোয়া বা স্নান করার কথা কেউই ভাবছে না।চা দিয়ে গেছে।বিছানায় বসেই চা খেয়ে সবে সিগারেট ধরিয়েছি,দেখি বৃষ্টি থেমে গিয়ে মেঘ সরে যাচ্ছে।পাহাড়ে যেমন হুট করে বৃষ্টি নামে,তেমনই হুট করেই আবার বন্ধ হয়ে যায়।লাফিয়ে উঠলাম বাথরুমে যাব বলে।কারন বৃষ্টি থেমেছে যেই সাথে সাথে বেরোতে হবে বলে স্নান করার জন্য লাইন পরে যাবে।সবাই তৈরি হয়ে বেরোতে বেরোতে প্রায় এগারটা বেজে গেল।প্রথমে আমরা যাব লামাহাটা ছাড়িয়ে একটা হ্যাঙ্গিং ব্রিজ আছে সেটা দেখতে,তারপর যাওয়ার কথা মংপুর কাছে একটা ঝর্ণা আছে সেখানে।হ্যাঙ্গিং ব্রিজের কাছে পৌছতেই আবার বৃষ্টি নেমে এলো।এবার অবশ্য হাল্কা ঝিরঝির করে।ওই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই এগোতে শুরু করলাম।এবার উৎরাই।নামতে হবে।পাথরের রাস্তা,বৃষ্টি পরে পিছল হয়ে গেছে।ওর মধ্যে পা টিপে টিপে এগিয়ে গেলাম ব্রিজের দিকে।ব্রিজে দেখার মত কিছুই নেই।শুধু ব্রিজটা দুটো পাহাড়ের মাঝে ঝুলে রয়েছে দুদিকের দুটো লোহার শক্ত ফ্রেমের সাপোর্টে।তবে মাঝখানে কাঠের পাটাতনের ওপর কেউ দাঁড়িয়ে দোলালে পরে পুরো ব্রিজটা দুলতে থাকে।গাড়োয়াল পার্বত্য অঞ্চলে এরকম বেশ কিছু ব্রিজ দেখেছি।সেখানে কিছু ফটোশেসন হওয়ার পর যখন চলে আসব তখন আবার জোরে বৃষ্টি শুরু হল।একটা শেডের নিচে খানিক্ষণ অপেক্ষা করে বৃষ্টি ধরার পর চলে এলাম গাড়িতে।এরপরের গন্তব্য মংপুর কাছে একটা ঝর্না। গাড়ির ড্রাইভার আজকে বদলে গেছে।আমৃত আজকে আর নেই।ঝর্ণায় যাব শুনে ড্রাইভার বলল ওখানে আপনারা যেতে পারবেন না।অনেক দূর।ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।ড্রাইভারদের,বিশেষত পাহাড়ি ড্রাইভারদের এই কথাটা খুব সাধারন।কোথাও নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে না হলে ওরা এই কথাটাই বলে থাকে।অনেক দুর,আপনারা যেতে পারবেন না,ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে।ওরা আসলে শহরের লোকেদের পালসটা খুব ভালো ধরতে পারে,কারন রাতের অন্ধকারে পাহাড়ি পথে গাড়িতে চরা নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা ভীতি কাজ করে।কিন্তু ও তো আর জানে না,আমরা সেই দলের লোকেদের মধ্যে পরি না,তাই এখানে ওর হিসেবটা একটু গন্ডগোল হয়ে গেছিল।আমরাও জেদ ধরে বসে রইলাম ঝর্ণায় যাবই।শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বলল ঠিক আছে নিয়ে যাচ্ছি।তবে পরে ভেবে দেখেছিলাম ও খুব একটা ভুল কিছু বলে নি।কারন ওই ঝর্ণায় আমরাই ছিলাম প্রথম টুরিস্ট যারা পুরোটা গেছি।কোন টুরিস্ট অখানে যায় না রাস্তার দুর্গমতার জন্য।অ্যাডভেঞ্চারের তীব্র নেশা আমাদের অত অবধি নিয়ে গেছিল।এমনকি ফেরার পর সুশীলজি শুনে পর্যন্ত অবাক হয়ে গেছিলেন আমরা ঝর্ণা অব্দি যেতে পেরেছি শুধু নয়,ঝর্ণাতে স্নানও করেছি বলে। মংপুতে এসে গাড়ি দাঁড়ালো ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেক্ট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন কর্পোরেশন লিমিটেডের অফিসের সামনে।এখান থেকেই ঝর্নার দিকে যাওয়ার পথ নেমে গেছে নিচে।গেটে সিকিউরিটি গার্ডকে অনুরোধ করাতে উনি সবাইকে ভেতরে ঢুকে বাথরুম করার অনুমতি দিলেন।প্লান্টটা তখন ডি এনারজাইসড হয়ে পরে রয়েছে।মানে ওখান থেকে কোন ডিস্ট্রিবিউশন আপাতত হচ্ছে না।ঢুকে দেখি পুরো আমার অফিসের মত সেট আপ।সুইচ বোর্ড থেকে শুরু করে সিংক্রোনাইজিং প্যানেল পর্যন্ত সবই রয়েছে।একজন সুপারভাইজার,তার সাথে আলাপ পরিচয় হল।
ওখান থেকে বেরিয়ে এবার নিচে নামার পালা।যত নিচে নামছি রাস্তা তত সরু হচ্ছে।কিছুটা যাওয়ার পর রাস্তা বলে আর কিছু রুইল না।ড্রাইভার থাপাও আমাদের সাথে পথ দেখিয়ে নামছে নিচে।হাঁটতে হাঁটতেই ও বলল এখানে আমরাই প্রথম টুরিস্ট যারা ঝর্ণার কাছে যাচ্ছি।ওপরে থাকতেই ঝর্ণার জলের আওয়াজ পাচ্ছিলাম,যত নামছি আওয়াজ ততই গর্জনে পরিণত হচ্ছে।ভাগ্য ভাল ছিল এই সময় বৃষ্টিটা একদম ছিল না।রোদ ঝলমল করছে আর রীতিমত উৎরাই ভাঙতে গরম লাগছে।একটা জায়গায় দেখলাম রাস্তা একদম শেষ।এরপর যাব কি করে?থাপা বলল এবার ওপরে উঠতে হবে।ততক্ষণে আমরা ঝর্ণার পাশে চলে এসেছি।পাহাড়ি ঝর্ণা তার সম্পূর্ন কলোচ্ছাস নিয়ে বয়ে চলেছে তীব্র স্রোতে।ওর পাশেই একটা পাথর টপকে বাঁক ঘুরে দেখলাম ওপর থেকে আঁকাবাঁকা পথে নেমে এসেছে ঝর্ণা।ওর মাঝেই পাথরে পা রেখে রেখে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।কিছুটা এগিয়ে তারপর একটা সুবিধাজনক জায়গা দেখে আমরা থামলাম।বাংলো থেকে যখন বেরিয়েছিলাম তখনই সবাই তৈরি হয়ে এসেছিলেম যদি সুযোগ পাই তাহলে ঝর্ণার জলে স্নান করব।ওই জায়গা দেখে কেউ আর ঠিক থাকতে পারল না।এক এক করে পোশাক পালটে সবাই নেমে পরল জলে।এরপর চলল জলের মধ্যে হুটোপাটি।ও বলা হয়নি,গাড়ি থেকে নামার সময় হাতে আমাদের বিয়ারের বোতল ছিল,স্নান করতে করতে তাদের সদ্ব্যবহার করতে লাগলাম।কনকনে ঠান্ডা জলে বিয়ার সহযোগে স্নান বহুদিন মনে থাকবে।মাঝে একবার আরেকটু ওপরে যাওয়ার কথা ভেবেছিলাম কয়েকজন,কিন্তু থাপাই বারণ করল।বলল যদি বৃষ্টি শুরু হয় তাহলে কোন পাথরের খাঁজে জমেথাকা জল নেমে আসলে ওপরে আটকে পরতে হবে।অনেকটা হড়কা বানের মত।যেখানে এখন আছি সেই জায়গাটা অনেকটা নিরাপদ।আর ওপরে না ওঠাই ভালো।প্রায় ঘন্টাখানেক কি তারো বেশি জলের মধ্যে হুটোপাটি চলল,তারপর যখন গা হাত পা মুছে ওপরে উঠতে শুরু করেছি তখন খেয়াল পরল এবার ক্ষিদেটা বেশ জানান দিচ্ছে।আবার সেই একই রাস্তা দিয়ে জঙ্গলের মধ্যে সরু পথ ধরে এবার উঠতে শুরু করলাম।যখন উঠে আসলাম,ক্ষিদের চোটে সবার পেট জ্বলছে।ভাগ্যিস কলকাতা থেকে আনা কেক বিস্কুট নিয়ে ব্যাগে করে নিয়ে আসা হয়েছিল,তাই দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ক্ষুন্নিবৃত্তি হল।এরপরের গন্তব্য লামাহাটা যেখানে বেশ কিছুটা ট্রেক করে উঠে একটা লেক পরবে।
কপাল মন্দ হলে যা হয়।লামাহাটা পৌঁছে দেখা গেল আবার আঝোর ধারায় বৃষ্টি,আর মেঘে চারিদিক ঢেকে রয়েছে।কিছু দেখার উপায় নেই।ইতিমধ্যে বিকেল চারটে বেজেছে,অথচ আমাদের কারো লাঞ্চ হয়নি।কাছাকাছি যেকটা দোকান ছিল কারো কাছে কোন খাবার নেই।অবশেষে একটা জায়গায় অনেক অনুরোধের পর একটা মেয়ে এসে নিজের দোকান খুলে সবার জন্য ম্যাগি আর মোমো বানাতে বসল।দু প্লেট করে ম্যাগি আর মোমো খেয়ে যখন উঠলাম তখন বাজে প্রায় ছটা।ওই বর্ষনক্লান্ত রাস্তা ধরে গাড়ির ফগ লাইট জ্বালিয়ে পাহাড়িয়া আলো আঁধারিতে মাখামাখি হয়ে বাংলোয় ফিরতে ফিরতে প্রায় সাড়ে সাতটা।ফেরার পথে পাহাড়ের অন্য এক রূপ দেখেছিলাম।কিছুটা উল্লেখ আগে করেছি।রাতের পাহাড়ে ছোট্ট ছোট্ট আলোর ফুলকি কেমন লাগে দেখতে।তবে সেদিন ওই অন্ধকার রাস্তা দিয়ে ফিরতে ফিরতে দূরের পাহাড়গুলোর রূপ আরো ফেটে পরছিল।ইতিমধ্যে মেঘ অনেকটাই কেটে এসেছিল,তাই দূরের পাহাড় জোনাকি আলোয় যেমন সেজে উঠছিল,সেরকমই আবার অল্প কিছু মেঘ পাহাড়ের খাঁজে আটকে একটা ধুম্রজালের মত সৃষ্টি করছিল,ঠিক যেন মনে হচ্ছিল কোন ধোঁয়ার নদী বয়ে চলেছে পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে।খুব ইচ্ছে করছিল একবার অন্তত ডুবে মরি ওই ধোঁয়া মেঘের নদীতে।এর সঠিক বর্ণনা দেওয়া আমার পক্ষে অন্তত সম্ভব নয়।
বাংলোয় পৌঁছে ঠিক হল পরদিন লামাহাটার ওই লেক দেখতে আসা হবে, আর তার সাথে লেপচাজগত আর ঘুম স্টেশন।সেই মত গাড়িও বলে দেওয়া হল কটার সময় আসবে।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আকাশ পুরো পরিষ্কার।রোদে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক।নীল আকাশে কিছু পেঁজা তুলোর মত মেঘ ঘুরে বেরাচ্ছে।সেদিন ছিল বুদ্ধপূর্ণিমা।পেছনের মনাষ্ট্রিতে সকাল থেকেই পুজোপাঠ চলছে।ব্রেকফাস্ট সেরে স্নান করে একবার মনাষ্ট্রিটা ঘুরে এলাম।
আমাদের প্রথম গন্তব্য লামাহাটা।সেখানে পৌঁছে আগের দিনের মত আর খাওয়ারের ব্যাপারে ভুল করলাম না।আগেই একটা হোটেলে রুটি সবজি আর ম্যাগির অর্ডার দিয়ে রাখলাম।ওপরে যে লেকটা আছে সেটা দেখে যাতে নিচে নেমে খাওয়ারটা অন্তত জোটে।লেকটাকে কেন্দ্র করে একটা ইকো ট্যুরিজম পার্ক করা হয়েছে,যেটা ২০১৩ সালে মমতা ব্যানার্জি উদ্বোধন করেন।ইতিউতি বিক্ষিপ্ত কয়েকটা বসার জায়গা আর একটা ওয়াচ টাওয়ার নিয়ে পার্কটা।এই পার্কের একদিক দিয়েই রাস্তা ওপরে উঠে গেছে লেকের দিকে।বেশ খাড়াই রাস্তা সেটা।ওই ধরে ওঠা শুরু হল।যারা ট্রেকিং করে নি কোনদিনো,তারাও অল্প হলেও ট্রেকিং এর অভিজ্ঞতা আর থ্রিলটা নিয়ে নিতে পারল ভালো করেই।উঠতে উঠতেই বুঝতে পারছিলাম তাপমাত্রা কমছে।আবার মেঘ আসতে শুরু করেছে।অবশেষে প্রায় ঘন্টা খানেক বাদে যখন একদম ওপরে উঠে লেকের কাছে পৌঁছলাম তখন মেঘ ভালোই ঘিরে ধরেছে।লেকের যে দিকে আমরা এসে পৌঁছেছি সেই দিকটাই শুধু দেখা যাচ্ছে,অন্যদিকটা পুরো মেঘে ঢাকা।আবার সেই সামনে দিয়ে মেঘ চলে যাওয়া,আর ভেজা ভেজা ভাব।যেন মনে হয় আমরা এসে পরেছি মেঘেদের দেশে।লেকের কাছে একটু ঘোরাঘুরি করে আর ফটোশেসন করে নিচে নামতে শুরু করলাম।পাহাড়ে ওপরে উঠতে যে পরিশ্রম হয়,সেটা শুধুমাত্র দমের ঘাটতির জন্য,কিন্তু নিচে নামাটা আর বেশি কঠিন।এর কারণ হচ্ছে নিচে নামতে গেলে চলার গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।ইচ্ছে মতন দ্রুততার সাথে নামা যায়না,তাতে উলটে পরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।আক্ষরিক অর্থেই পা টিপে টিপে চলতে হয়।এই কারনে পায়ের ব্যাথা বেশি হয় নামার সময়টাতেই।নেমে লাঞ্চ সারলাম।ঘুরতে আসার পর এই প্রথম কিছুটা ঠিকঠাক সময়ে লাঞ্চ করলাম।যদিও লাঞ্চ যখন শেষ করলাম তখন ঘড়ির কাটা তিনটে ছুয়েছে,তাও পাঁচটা ছটায় লাঞ্চ শেষ করার চেয়ে সেটা অনেক ভালো।এরপরের গন্তব্য লেপচাজগত।সেখানে অবশ্য দেখার মত কিছুই নেই।তার ওপর যখন ওখানে পৌছানো হল তখন আবার আগের মত মেঘে ধেকে গেছে সবদিক।কয়েকটা হোম স্টে আর কিছু খাবারের দোকান চোখে পরল।এছাড়া আর দেখার মত কিছুই নেই।তবে লেপচাজগত আর লামাহাটা থেকে নাকি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়।কিন্তু আমাদের বরাত এতই খারাপ,ঘুরতে আসার পর থেকে এখনও অব্দি কোথাও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাই নি ফগের জন্য।বেশ ঠান্ডা লাগছিল ওখানে।ভেবেছিলাম ওখান থেকে চা খেয়ে রওনা দেব,কিন্তু যেভাবে অন্ধকার হয়ে আসছিল তাতে ড্রাইভার থাপা বলল ঘুম যেতে যেতে আর কিছু দেখা যাবে না।ঠিক করলাম ঘুমে গিয়েই নাহয় চা খাওয়া যাবে।সেইমত আর সময় নষ্ট না করে গাড়ি চলতে শুরু করল পৃথিবীর সবথেকে উচ্চতম রেলস্টেশন ঘুম অভিমুখে।
ফ্রেমে ধরে রাখা ছবির মত রেলস্টেশন ঘুম।রাস্তা এসে দুদিকে বেঁকে গেছে,একদিক চলে গেছে একটু নিচের দিকে,আরেকদিক চলে গেছে রেললাইনের পাশ ধরে দার্জিলিঙের দিকে।সেই বাঁকের মুখে স্টেশন।মাটি থেকে অল্প উঁচু প্ল্যাটফর্ম,সেখানে বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু লোক ঘুরে বেরাচ্ছে।একটা বসার বেঞ্চে এক পাহাড়ি যুগল চারিদিকের সমস্ত কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একান্তে নিজেদের মধ্যে গল্প করে চলেছে।প্ল্যাটফর্মে টিকিট কাউন্টারের সামনে একটা বড় ফটোফ্রেম,তাতে বরফ ঢাকা ঘুম স্টেশনের কয়েকটা ছবি।ইতিমধ্যে অন্ধকার হয়ে আসছে।বিকেলের দিক।এখন কোন ট্রেনও নেই।তাই ছোট্ট রেললাইন দিয়ে লোকজন অনায়াসেই হেঁটেচলে বেরাচ্ছে।সামনে এগোতে এগোতে হঠাৎ করেই যেন প্ল্যাটফর্ম শেষ।খেলনা লাইনের মতই ছোট্ট তয় ট্রেনের লাইনটা চলে এসেছে রাস্তার ওপর।এই রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেই পৌঁছে যাব দার্জিলিং।এই রাস্তাতেই শুটিং হয়েছে আরাধনা সিনেমার বিখ্যাত গান মেরে সপ্নো কি রানি কব আয়োগি তুম।রাস্তাও যেন স্বপ্নেরই মত রাস্তা।নিচের দিকে রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে গিয়ে একটা চায়ের দোকান পাওয়া গেল।সেখানে অসাধারণ বললেও কম বলা হবে এরকম চা আর ততোধিক অখাদ্য সিঙ্গারা খেয়ে চা পর্ব শেষ করে ফিরে চললাম আট কিমি দূরে তাকদার উদ্দেশ্যে।
সেদিন রাতেরবেলায় আরেকটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা হল।ঘড়ির কাঁটা তখন দশটার ঘরে।আরেকটু পরেই খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পরব সবাই।তাকদার বাংলোটা আগেই বলেছিলাম তাকদা বাজার থেকে একটু ছাড়িয়ে অল্প চড়াই উঠে ওপর দিকে।মোটামুটি পাঁচশো মিটার মত দূর তাকদা বাজার থেকে,আর এই রাস্তাটা পুরোটা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে।সেদিন বাংলোর বারান্দায় আড্ডা আর গল্পের মাঝেই আমি সহ আরো চারজন উঠে পড়লাম নিচে নামব বলে।রাতের জঙ্গলের অভিজ্ঞতা কারো নেই।সেটা কেমন হয় তা জানার জন্যই এই অভিজান।বাংলোর সামনের বাগান ছাড়িয়ে গেট পেড়িয়ে আস্তে আস্তে নামতে শুরু করলাম।ঘুটঘুটে অন্ধকার রাস্তা পুরোটা।আকাশ পরিষ্কার না থাকায় চাঁদের আলোও নেই।মোবাইলের আলোই ভরসা।সেই আলোয় পথ দেখে দেখে নিচে নামা হল।চারিদিকে ঝিঝি পোকার আওয়াজের মত একটা আওয়াজ,কিন্তু ঝিঝি পোকা নয়,অন্য কোন কিছুর আওয়াজ।মোবাইলের আলোয় শুধুমাত্র আমরা কয়েকজন নিজেদের মুখই দেখতে পাচ্ছি আর অন্য কোন কিছুই নয়।চিরকাল কলকাতায় মানুশ।এরকম অন্ধকার এর আগে কোথাও দেখি নি।অন্ধকারেরও যে প্রকারভেদ হতে পারে তা এই প্রথম দেখলাম।এরকম অন্ধকারের কথা এর আগে গল্প উপন্যাসেই পরেছি শুধু।একদম নিকষ কালো নিরন্ধ্র অন্ধকার।মনে হয় যেন সভ্যতার গতি এখানে এসে থমকে গেছে।আমরা ফিরে গেছি সভ্যতার ঊষালগ্নে।আসেপাশের উঁচু উঁচু গাছগুলো যেন সেই পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্নের সময়কার গাছ।এখানে কোনদিনও মানুষের পা পরে নি,এবং গাছপালাগুলো এখনও সেই আদিলগ্নে যেমন অবস্থায় ছিল সেই অবস্থাতেই রয়ে গেছে।তন্ময় হয়ে উপভোগ আর উপলব্ধি করেছিলাম জঙ্গলের সেই রাতের সৌন্দর্য।
পরদিন ফিরতে হবে।সেদিন কোথাও বেরোনোর কোন প্ল্যান নেই।সকালবেলাটা বাংলোতেই কাটিয়ে দুটো নাগাদ তাকদা ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে পরলাম।বিদায় পাহাড়,বিদায় মেঘ বৃষ্টির লুকোচুরি আর চা বাগান আর বিদায় নাগরিক ক্লান্তি দূর করে পুনর্জীবন প্রাপ্তি,কারন কলকাতায় গিয়ে তো আবার সেই একঘেয়ে কর্মব্যস্ততার মধ্যে ডুবে যাওয়া।এনজেপি তে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে সাতটা।যদিও পৌঁছে যাওয়ার কথা ছটার মধ্যে,কিন্তু মাঝখানে কিছু ব্রেক নিয়ে প্রায় সাড়ে সাতটা নাগাদ পৌঁছলাম।সেখান থেকে নটায় ট্রেন।এনজেপি ষ্টেশন থেকে বেশ কিছুটা দূরে নিজবাড়ি বলে একটা ছোট্ট ষ্টেশন আছে।ট্রেন সেখানে দাঁড়ায় না কিন্তু ওই ষ্টেশন এর কিছু পর অব্দিও প্রায় পাহাড়ের মাথা দেখা যায়।ট্রেনে ফিরতে ফিরতে যতক্ষণ অব্দি না পাহাড়ের মাথার ওই ছোট্ট ছোট্ট আলোগুলো দৃষ্টির অন্তরালে হারিয়ে গেছে ততক্ষণ অব্দি পাহাড় দেখে গেছি এবং যখন চোখের আড়াল হয়েছে তখন মনে মনে পাহাড়কে আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জানালা থেকে সরে এসেছি।
No comments