Darjeeling Travel Experience by Nitesh Agarwala
জন্ম বাংলায় , কর্ম সূত্রে মুম্বাইয়ে থাকি। IT ডেভেলপার হওয়ায় ছুটি মেলে না সহজে। কাজের দরুন অল্প সল্প ঘুরেছি। তবে দার্জিলিং না দেখার আক্ষেপটা বরাবরই ছিল। হটাৎ করে সুযোগটাও এসে গেল। শিলিগুড়ি নিবাসী এক কলিগের বিয়ের নেমন্তন্ন রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়ে আমরা ৯ জন বেরিয়ে পড়লাম গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। স্পাইসজেটের টিকিট কেটে সোজা কোলকাতা। শেষ মুহূর্তে টিকিট কাটতে গিয়ে পকেটে ফুটো টা একটু বড়ই হল। ডিরেক্ট ফ্লাইট না পাওয়ায় লে ওভার টাইমে আমার মারাঠি বন্ধুদের কোলকাতা এয়ারপোর্ট টা ঘোরা হয়ে গেল। মুম্বাইয়ের ডোমেস্টিক এয়ারপোর্ট টা অতটা ঝা চকচকে নয় আর কি।
তিন মাস পর বাংলায় ফিরে আমার মন তখন দার্জিলিং ভুলে পলাশী ফিরতে চাইছে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি আমার বাড়ি পলাশী তে। শিয়ালদা স্টেশন থেকে পাক্কা ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট লাগে। যাই হোক , বাগডোগরার টিকিট কেটে উঠে বসলাম চপার ফ্লাইটে। এই ছোটো পাখাওয়ালা বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতা আগে ছিল না। প্রচন্ড শব্দ করে বিমান যখন আকাশে উড়ল তখন মনকে এই বলে শান্তনা দিচ্ছি যে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীও খুব ঘন ঘন দার্জিলিং যান। তিনিও এই পাখাওয়ালা বিমান গুলোতেই যান নিশ্চয়ই। প্রান পাখি অতটা সহজে উড়বে না। খুব ভয়ে ভয়ে , এয়ার হোস্টেস কে বার তিনেক জলের জন্য বিরক্ত করে পাক্কা ৪০ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড পর নামলাম ইন্ডিয়ান আর্মির কন্ট্রোলে থাকা বাগডোগরা এয়ারপোর্টে। পাইলট মাঝে এনাউন্স করেছিল মাউন্ট এভারেস্ট দেখা যাচ্ছে বলে, কিন্তু চপার এতো দুলছিলো যে ভয়ে আমরা এভারেস্ট কি জিনিস , খাই না মাথায় দেয় ভুলে গেছি। এয়ারপোর্টে নেমে পাক্কা আধ লিটার জল খেয়ে বেঁচে আছি এই আনন্দে একটা সেলফি তুলতে যাব ঠিক তখনই একজন আর্মি জওয়ানের হুঁশিয়ারি - ডোন্ট টেক ফটোস্ , ইটস্ আ রেস্ট্রিকটেড এয়ারপোর্ট। নেহাতই বাধ্য ছেলের মতো বেরিয়ে এলাম এয়ারপোর্ট থেকে। গাড়ি বলা ছিল। সবাই মিলে হই হই করে উঠে বসলাম।
শিলিগুড়ি শান্ত শহর। মিনিট কুড়ি পরে পৌছালাম হাকিমপাড়ায় , এখানে হোটেল ঊমা তে বুকিং করা ছিল আগে থেকেই। ঊমা স্ট্যান্ডার্ড হোটেল, ছোটো কিন্তু পরিস্কার এবং ছিমছাম। পুরো রাত জাগা, তাই বেশি দেরি না করে গরম জলে স্নান করে ব্রেকফাস্টের খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম। আনন্দ হচ্ছিল এটা ভেবে যে মুম্বাইয়ের বড়া পাও (পাউরুটির মধ্যে আলুর চপ ভরা) খেতে হবে না, ঐ জিনিসটা খেয়ে খেয়ে মুখে চরা পরে গিয়েছিল। পরোটা ঘুগনি আর অমলেট দিয়ে প্রাতরাশ করে ঘন্টা খানেকের মধ্যে ফিরে এলাম। বিকেলে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। তাই ফ্রেশ হয়ে সোজা বিছানায়। জমিয়ে ঘুম দিয়ে যখন উঠলাম তখন বিকেল ৪ টে। আমরা ছেলেরা চটপট রেডি হয়ে নিলাম যাতে দেরি না হয়। কিন্তু সাথে তিন তিনটে দেবী থাকায় দেরিটা হওয়ারই ছিল।
বেশ বড়সড় অনুষ্ঠান। বাঙালি খাবার আমার মারাঠি বন্ধুদের মন জয় করে নিল। করবে নাই বা কেন ! ওদের কাছে খাবার মানেই তো পাউরুটি (বড়া পাও, সমোসা পাও, ভজিয়া পাও )। আমাদের ফুচকা খেয়ে মুম্বাইয়ের মিষ্টি মিষ্টি পানিপুরীকে একজন তো আজীবন বর্জন করার শপথ ই নিয়ে নিল। বিয়ের নেমন্তন্ন খেয়ে ফিরতে ফিরতে একটু রাত হলো। পরের দিন দার্জিলিং যাওয়ার প্রোগ্ৰাম। তাই হোটেলে ফিরে এসে যে যার ঘরে বিশ্রাম নিতে চলে গেলাম।
ঘুম ভাঙ্গলো মোবাইল ঠাকুরের চেঁচামেচিতে। জংশন পৌঁছে দাম দর করে গাড়ি ঠিক করে চল্লাম বহু আকাঙ্খিত বাঙালি জাতির গর্ব পাহাড়ের রানি দার্জিলিং এর উদ্দেশ্যে। আমার এর আগে লোনাভ্লা , খান্ডালা, মহাবলেশ্বর, মাথেরান হিল ষ্টেশনে ঘোরার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু দার্জিলিং হল দার্জিলিং। অনেকটা আই-ফোনের মতো। লেভেল টাই আলাদা। যাই হোক কার্শিয়াং পৌঁছে প্রাতরাশ করে নেওয়া হল। আমাদের বাংলা তে আর কিছু থাক না থাক সুস্বাদু খাবারের দোকান অনেক আছে। গরম গরম মোমো আর চা সহযোগে খাওয়াটা ভালোই হলো। এবার সোনাডা হয়ে সোজা দার্জিলিং। যত ওপরে উঠছিলাম কুয়াশা আর ঠান্ডা তত বাড়ছিলো। ঘুম ষ্টেশন টা দেখে একটু নিরাশ হলাম। একটা নষ্টালজিয়া ছিল ঘুম ষ্টেশন কে নিয়ে, আকারে অতটা ছোটো হবে ভাবি নি। পৃথিবীর উচ্চতম ষ্টেশন একটা দুতলা বাড়ির চেয়েও ছোটো এটা বিশ্বাস করা একটু কষ্টকর।
ঘন্টা দুইয়ের জার্নি শেষে চেক ইন্ করলাম হোটেল সুইট হোম ইন্টারন্যাশনাল এ। ম্যাল থেকে মিনিট পাঁচেক হাঁটা পথ। খুব ভালো হোটেল। আগে থেকেই বুকিং করা ছিল। ফ্রেশ হয়ে সোজা বেরিয়ে পড়লাম মার্কেট ঘুরতে। খিদেও পেয়েছিল বেশ। রাস্তায় চোখে পড়ল হোটেল সোনার বাংলা। খুব নাম শুনেছিলাম, বুকিং পাই নি ফুল ছিল বলে। যাই হোক ভাবলাম এদের রেস্টুরেন্ট টা অন্তত উপভোগ করা যাক।অসাধারণ খাবার। ঝুরঝুরে আলুভাজা মুগ ডাল সহযোগে নন্ ভেজ থালি মন পেট দুটোই জয় করে নিল। বিল মিটিয়ে বেড়িয়ে এলাম। এবার ম্যাল ঘুরে দেখার পালা।
আপাত দৃষ্টিতে ম্যাল ঘুরে যা বুঝলাম ওখানে গরম পোশাকের কালেকশন বেশ ভালোই আছে। সস্তায় ভালো শালও পাওয়া যাচ্ছিল। একটা তিব্বতী আর্টিফ্যাক্টের দোকানে ঢোকা হল। সাজানো মুর্তি গুলো দেখলে বোঝা যায় কিছু মানুষ কি অপরিসীম ধৈর্য্য নিয়ে ওগুলো বানিয়েছে। আমার একটা টিবেটিয়ান তরবারি খুব মনে ধরেছিল। দাম বললো ৮০০০। আমি ৫০০০ পর্যন্ত রাজি ছিলাম। হল না। অনেকটা হাঁটাহাঁটি করে পুরো ম্যাল, চৌরাস্তা আর চক বাজার চষে ঢুকে পড়লাম গ্লেনারিজ্ রেস্ট্রো তে। গরম গরম চা আর ফিশ ফ্রাই সহযোগে এক জমাটি আড্ডা বন্ধুদের সঙ্গে। বিষয় : বাঙালী খাবার।গত সাত দিন তিনি দেখা দেন নি। ভোর চারটের সময় ৭ জন অবাঙালি কে ৪ ডিগ্ৰী টেম্পারেচারে জোর করে বিছানা থেকে টেনে তুলেছি। আজ যদি দেখা না দেন তাহলে একটা মারও মাটিতে পড়বে না। এই ভাবতে ভাবতে গাড়ি নিয়ে চলে এলাম টাইগার হিলে।আহা কি দেখিলাম। জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না।ড্রাইভার সাহেবের কথা যদি সত্যি ধরি তাহলে এটা নাকি এখনো পর্যন্ত ২০১৯ এর সেরা সূর্যোদয়। কাঞ্চনজঙ্ঘা তুমি অপরুপ তুমি অসাধারণ। সমস্ত কষ্ট নিমেষে মিলিয়ে গেল।এরপর বাতাসিয়া লুপ, ঘুম মনাস্ট্রি, পিস প্যাগোডা, চিরিয়াখানা, ভয়ংকর রাস্তা পার করে রক গার্ডেন সবই হল এক এক করে। কিন্তু দার্জিলিং এর হৃদপিন্ড ওই টাইগার হিলের অসাধারণ সূর্যোদয় ই।পরের দিন লামাহাটা হয়ে নেমে এলাম শিলিগুড়ি তে। বাড়ি ফেরার পালা। দার্জিলিং আমাদের নতুন করে বাঁচার অক্সিজেন দিল।ও হ্যা । বলছিলাম কি দার্জিলিং এর রোপওয়েতে চেপে নার্ভাস হয়ে গিয়ে যা তা কান্ড হয়েছিল। ৫ কিলোমিটার লম্বা নাকি ওটা। আমি আড়াই কিলোমিটারেই ইতি টেনেছিলাম।
Ok
ReplyDelete