প্রকৃতি বোঝার মতন মন বা কাব্য করার মতন চোখ আমার নেই। যখন মনে হয় পকেট একটু হালকা হলেও ক্ষতি নেই তখন বেড়িয়ে পরি। না কোনো পরিকল্পনা করে নয় । এবারেও তাই। কিন্তু হঠাৎ হলেও গন্তব্য তো একটা হতে হবে, তাই এবার ঠিক হলো , সুন্দরী দার্জিলিং।
দার্জিলিং কে না ঘুরেছে, সবাই জানে বাঙালী হয়ে দার্জিলিং দেখেনি এটা হয়ই না। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সেটা সর্বতঃভাবে সত্য । যখনই কথা হয়েছে নাকচ হয়ে গেছে তুমি এত জায়গা এত পাহাড় প্রকৃতি দেখেছো তোমার দার্জিলিং ভালো লাগবে না। কিন্তু সেই দার্জিলিং যাওয়া হল শেষ পর্যন্ত।
টিকিট কাটা হলো Air India -য়, দুপুরের 1.55 flight । বিকেলের মধ্যে পৌঁছে যাবে। কিন্তু তা দেরী হতে হতে 6 টা বেজে গেল। বাগডোগরা পৌঁছে বেরোতে বেরোতেই সন্ধে 7.15। সবাই বারণ করলো ওপরে উঠতে। কি করবো ভাবছি। হোটেল আগেই বুক করে নিয়েছিলাম নিজেই । যদি আবার destination change করে দেয় সেই আশঙ্কায়। সময় হাতে কম, ট্যাক্সি ও নেই বললেই চলে ছোট airport আর কোনো flight নেই ।লোক ও কম তাই গুটি কয়েক ট্যাক্সি ভরসা। কি করবো না ভেবে কি হতে পারে সেটা ভেবে হেসে উঠলাম, পিছুটান তো কিছু নেই , কিছু হলে ….হেসে নিলাম নিজের মনে। চলো বলে সম্মত হলাম দুজনেই। সঙ্গে অবশ্য সোমা আছে একটু চিন্তা ছিল যাই হোক রওনা দিলাম।
অন্ধকারে ডুবে থাকা পাহাড় আমাদের কিছুই দেখালো না। যাবার পথে দূর থেকে আলো ঝিলিমিল কার্শিয়াং দেখে বলার চেষ্টা করলাম আহা কি সুন্দর, না । আমি রসকষহীন মানুষ , শুধু দেখলাম বললাম না কিছুই । হোটেলে পৌঁছলাম প্রায় রাত দশটা । পথে কোনো এডভেঞ্চার হলোনা, আমার কি আর বুদ্ধদেবর বাবলীর মতন কপাল যে আব্রাক্যাডবরা বলার মতন পরিস্হিতির সম্মুখীন হবার সৌভাগ্য হবে। হলোও না সেই সৌভাগ্য।
ইচ্ছে ছিল কাল ভোরেই দার্জিলিং এর আসল আকর্ষণ sunrise দেখবো কিন্তু বাবান এর মনে হলো এত রাতে ফিরে কাল না করে পরশু, অগত্যা তাই মেনে নিলাম। রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে breakfast সেরে সেভেন পয়েন্ট এর উদ্দেশ্য গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। সারাদিন চড়িয়াখানা, জাদুঘর, রোপওয়ে, চা বাগান, মনেস্ট্রি, জাপানীজ টেম্পল, রকগার্ডেন আর দার্জিলিং এর ম্যাল দেখে ভালোই কাটলো। রাস্তার মোমো, ডিম চাউ এসব খেয়েই কাটালাম। মোটা মানুষ আর কত ঘুরবো হোটেলে ফেরাটাই এবার আমার জন্য ঠিক হবে তাই ফেরার পথ নিলাম। কালকের অপেক্ষা। যার জন্য সুন্দরীর এত অহংকার, তাকেই দেখবার আশায় যে আসা।ভোর 4টে গাড়ী আসবে বলে দিয়েছে। সারারাত ঘুম হল না। 4.10 এ বেড়িয়ে পরলাম আমরা।
ভোর 4.45 মিনিটে পৌঁছলাম স্বপ্নকে সত্যি করার চৌকাঠে। সামনে আকাশ ভরা তারা। আর পুব আকাশে জ্বলজ্বল করছে শুক তারা। মুগ্ধ হয়ে দেখছি হঠাৎ আওয়াজ উঠলো উত্তর পশ্চিমে দেখা দিয়েছেন শ্বেত শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা। কিন্তু … এত ম্লান কেন? অভিমান হলো নাকি! পূবদিকে শুক্রদেব তার ঘরে ফেরার পথে পা বাড়িয়েছেন। আর তখন আকাশের অন্ধকার কে ভেদ করে শুরু হয়েছে লাল,সাদা কমলা নানা রঙের হোলি খেলা। হোলির রঙে রেঙে উঠছে দিক থেকে দীগন্ত । আকাশও নিজেকে রাখতে পারছে না বঞ্চিত। কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘা ? তার স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে শ্বেত বস্ত্রে নিজেকে পরিপাটি করে মেলে ধরছে খুব সন্তর্পনে ধীরে ধীরে, যেন নিঃশব্দে কাউকে অনেক কিছু বলছে যা আমাদের শোনার বা বোঝার ঊর্ধ্বে । এই অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে হারিয়ে গেছি কখন... ঠিক তখনই মেঘবালিকা ঢেকে দিল আকাশ বাতাস সকলের প্রিয় কাঞ্চনজঙ্ঘাকেও।
বিভরতা ভেঙে বাস্তবে ফিরতেই হাসলাম নিজের মনে। অনুভবে যেন রাধাকৃষ্ণের হোলি খেলা। গোপিনীরা যতই রং দিক কৃষ্ণের গায়ে একবিন্দুও রং লাগছে না। রাধা যতক্ষন না কৃষ্ণকে নিজ হাতে রাঙিয়ে দিচ্ছে কৃষ্ণের হোলি সম্পন্ন হবে না ততক্ষন। কাঞ্চনজঙ্ঘা ও যেন বলতে চাইছে তোমরা যতই রেঙে ওঠো আমি সূর্যকে ছাড়া রঙের আঙ্গিনায় নিজেকে রাঙাবো না। কাঞ্চনজঙ্ঘা আর সূর্য্যের পার্থিব পরকীয়া প্রেম বিভোর করলো আমাকে। ঠিকই তো কেন তাদের প্রেম রোজ রোজ মেলে ধরবে সবার মাঝে। তাই তো মেঘবালিকা আদর করে পর্দা টেনে দিয়েছে।
মনে হলো কাঞ্চনজঙ্ঘা বুঝতে পারলো আমার মনের কথা, তাই মেঘের চাদর সরিয়ে দেখা দিল নতুন সাজে । ভোরের স্নান সেরে রক্তিম আভায় পরিপূর্ণ সলজ্জ রূপে । কি অপরূপ তুমি। ওদিকে পুব আকাশে উঁকি মারলেন সূয্যি বাবু। যেন দেখতে চাইছে কাঞ্চনজঙ্ঘার ঘুম ভাঙল কিনা। মনে হলো ,কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ দেখে তার পৌরুষে লাগলো। তাই নিজের রূপের শিখা মেলে ধরলো একটুও কাপর্নতা না রেখে। নিজেকে অপরুপ সাজে সাজাল। ভুলে গেল পূর্ব স্মৃতি। এই রূপের জন্যই একদিন বিপদে পড়েছিল পবন পুত্র হনুমানের কাছে । কিন্তু এখানেও যেন পৌরুষত্বের লড়াই। তাই নিজের রূপের ছটা বাড়িয়ে আকাশের বুক চিরে উদিত হতে লাগলেন সূয্যি বাবু। কাঞ্চনজঙ্ঘাও মুচকি হেসে নিজেকে গলানো সোনা দিয়ে একটু একটু করে স্বর্ণালংকারে ভূষিত করতে লাগলো স্বজত্নে , স্বমহিমায় । কি তার রূপ ! তার ভাষা আমার জানা নেই। কি দেখছি ?কোথায় আছি? এএও কিইই সম্ভব,!! কাকে ছেড়ে কাকে দেখবো?
মিষ্টি- মধুর ,রাগ -অনুরাগের খেলা চলতে চলতে হঠাৎ সূর্য তার সমস্ত সৌন্দর্যের ছটায় কাঞ্চনজঙ্ঘাকে রূপের ঝর্ণায় স্নান করিয়ে দিয়ে পুব আকাশে সম্পূর্ণ অন্য রূপে বিরাজমান হলেন যেন এই বলে, ‘আজ তবে থাক প্রিয় কাল আবার খেলবো হোলি '। কাঞ্চনজঙ্ঘাও তার অহংকারী স্বর্ণভূষণ ছেড়ে ফিরে এলো চিরপরিচিত শ্বেতশুভ্র রূপে, স্বমহিমায়। আমরা এই কাঞ্চনজঙ্ঘাকেই চিনি জানি ভালোবাসি ।লজ্জা নেই ,আড়ষ্টতা নেই ,দৃঢ় সপ্রতিভ সার্থক তোমাদের প্রেম । তোমরা একে অন্যের পরিপূরক। তোমাদের যুগযুগান্তরের প্রেম চলতে থাকুক যুগ যুগান্তর ধরেই । আমরা দুচোখ ভোরে তাকে দেখি , অনুভব করি নিজেদের সার্থক করে তুলি। ভালো থেকো দুজোনায়।।
দু চোখ দিয়ে অঝোরে ঝরছে জল । কেন - জানিনা। ভালোলাগা, ভালোবাসা, নাকি অন্য কিছু!? আমরা প্রেমকে উপভোগ করি। পরকীয়ার নিন্দা করি।কিন্তু তোমাদের চির সার্থক এই প্রেম অনুভবের উপলব্ধিতে রসনাতৃপ্ত করি।
সত্যি আমরা “ বিধাতার বাঁকা হাসির বিদ্রূপ ”
আমার প্রেমের অনুভূতিতে মিশে গেল-----
“একি লাবণ্যে পূর্ন প্রাণ প্রাণেশ হে….
আনন্দ বসন্ত সমাগমে।
বিকশিত প্রীতি কুসুম হে ……
পুলকিতচিত ফাগুনে...।।”’
এই কারণে তুমি সব সময় সব খানে রবিঠাকুর।।
রবিঠাকুর বারবার ছুটে এসেছেন কেন, কি কারণে? এই প্রেমলীলার সাক্ষী হবেন বলে।আর খুঁজে পেতে চেয়েছেন কাঞ্চনজঙ্ঘার মধ্যে দিয়ে তার চিত্রাঙ্গদাকে। জানা নেই। শুধু বিশ্বাস করি উনি দেখতে পেলে হয়তো সূর্যের কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রকৃত প্রেমের ভাষা পেতো।
আর কি ,মন ভাল না খারাপ কি জানি ঠিক ব্যাখ্যা নেই আমার কাছে , স্বল্প শিক্ষিত মানুষ গদ্য, পদ্য ,কাব্য কিছুই আসেনা তাই ভাবাবেগ কাকে বলে জানি না । আর সেই কারণেই হয়তো এত রূপের আবেশ না কাটা স্বত্তেও বেড়িয়ে পড়লাম দার্জিলিং সফর করতে। বাতাসিয়া লুপ , ঘুম মনেস্ট্রি, মহাকাল মন্দির আবার দার্জিলিং ম্যাল এবং মার্কেটিং।।টয়ট্রেন এর টিকিট কাটা হলেও শেষ অবধি হয়নি সেদিন ট্রেনের ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যায় অগত্যা টাকা ফেরত। তাই এবার গাড়ি বুক করে বেরিয়ে পরা কোনো ডেস্টিনি ছাড়াই।
পরের দিন পশুপতি মার্কেট আর মিরিক। পশুপতি মার্কেটে প্রায় সব নকল জিনিষ আর আমাদের সকলের পাড়ায় যত দোকান থাকে তার থেকেও কম দোকান, তাই পশুপতি ছেড়ে এবার মিরিক। মিষ্টি সুন্দর জায়গা, চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা চা বাগান। মিরিক এর প্রধান আকর্ষণ লেক, সুন্দর শান্ত পরিবেশ। চারিদিকের গাছপালা আর পাহাড় ঘিরে রেখেছে লেকটিকে । লেকের পাস দিয়ে গাছ পালায় ঘেরা রাস্তা দিয়ে ঘোড়া করে ঘুরতে বেশ লাগে, এগুলো অবশ্যই ঘোড়া । দার্জিলিং ম্যালের মতন দেখতে ঘোড়ার মতন ঘোড়া নয়।
এখানেই দুপুরের খাবার খেয়ে আর কিছু কেনাকাটা করে নিউজলপাইগুড়ি স্টেশন। দার্জিলিং মেল।
টাটা দার্জিলিং। তোমায় মনে রাখার দরকার পড়বে না তুমি মনে থেকে যাবে । আমি জানি তোমার থেকে অনেক বড় পাহাড় পর্বতের ডালি নিয়ে প্রকৃতি সাজিয়ে রেখেছে থরে থরে কিন্তু তুমি সর্বোত্তম সুন্দরী কারণ তুমি প্রেম ।। তুমি ঈর্ষা মোহ রাগ নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ,দেওয়া নেওয়া পরকাষ্ঠে নিজেকে আবৃত না রেখে বৃন্দাবনের মতন রহস্যময় প্রেম কথা না গেথে নিজেদের প্রেম মেলে ধরেছ সবার কাছে, তাকে ভোলা যায়না শুধু ভালোবাসা যায় , মনে থেকেই যায়।।
দার্জিলিং কে না ঘুরেছে, সবাই জানে বাঙালী হয়ে দার্জিলিং দেখেনি এটা হয়ই না। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সেটা সর্বতঃভাবে সত্য । যখনই কথা হয়েছে নাকচ হয়ে গেছে তুমি এত জায়গা এত পাহাড় প্রকৃতি দেখেছো তোমার দার্জিলিং ভালো লাগবে না। কিন্তু সেই দার্জিলিং যাওয়া হল শেষ পর্যন্ত।
টিকিট কাটা হলো Air India -য়, দুপুরের 1.55 flight । বিকেলের মধ্যে পৌঁছে যাবে। কিন্তু তা দেরী হতে হতে 6 টা বেজে গেল। বাগডোগরা পৌঁছে বেরোতে বেরোতেই সন্ধে 7.15। সবাই বারণ করলো ওপরে উঠতে। কি করবো ভাবছি। হোটেল আগেই বুক করে নিয়েছিলাম নিজেই । যদি আবার destination change করে দেয় সেই আশঙ্কায়। সময় হাতে কম, ট্যাক্সি ও নেই বললেই চলে ছোট airport আর কোনো flight নেই ।লোক ও কম তাই গুটি কয়েক ট্যাক্সি ভরসা। কি করবো না ভেবে কি হতে পারে সেটা ভেবে হেসে উঠলাম, পিছুটান তো কিছু নেই , কিছু হলে ….হেসে নিলাম নিজের মনে। চলো বলে সম্মত হলাম দুজনেই। সঙ্গে অবশ্য সোমা আছে একটু চিন্তা ছিল যাই হোক রওনা দিলাম।
অন্ধকারে ডুবে থাকা পাহাড় আমাদের কিছুই দেখালো না। যাবার পথে দূর থেকে আলো ঝিলিমিল কার্শিয়াং দেখে বলার চেষ্টা করলাম আহা কি সুন্দর, না । আমি রসকষহীন মানুষ , শুধু দেখলাম বললাম না কিছুই । হোটেলে পৌঁছলাম প্রায় রাত দশটা । পথে কোনো এডভেঞ্চার হলোনা, আমার কি আর বুদ্ধদেবর বাবলীর মতন কপাল যে আব্রাক্যাডবরা বলার মতন পরিস্হিতির সম্মুখীন হবার সৌভাগ্য হবে। হলোও না সেই সৌভাগ্য।
ইচ্ছে ছিল কাল ভোরেই দার্জিলিং এর আসল আকর্ষণ sunrise দেখবো কিন্তু বাবান এর মনে হলো এত রাতে ফিরে কাল না করে পরশু, অগত্যা তাই মেনে নিলাম। রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে breakfast সেরে সেভেন পয়েন্ট এর উদ্দেশ্য গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। সারাদিন চড়িয়াখানা, জাদুঘর, রোপওয়ে, চা বাগান, মনেস্ট্রি, জাপানীজ টেম্পল, রকগার্ডেন আর দার্জিলিং এর ম্যাল দেখে ভালোই কাটলো। রাস্তার মোমো, ডিম চাউ এসব খেয়েই কাটালাম। মোটা মানুষ আর কত ঘুরবো হোটেলে ফেরাটাই এবার আমার জন্য ঠিক হবে তাই ফেরার পথ নিলাম। কালকের অপেক্ষা। যার জন্য সুন্দরীর এত অহংকার, তাকেই দেখবার আশায় যে আসা।ভোর 4টে গাড়ী আসবে বলে দিয়েছে। সারারাত ঘুম হল না। 4.10 এ বেড়িয়ে পরলাম আমরা।
ভোর 4.45 মিনিটে পৌঁছলাম স্বপ্নকে সত্যি করার চৌকাঠে। সামনে আকাশ ভরা তারা। আর পুব আকাশে জ্বলজ্বল করছে শুক তারা। মুগ্ধ হয়ে দেখছি হঠাৎ আওয়াজ উঠলো উত্তর পশ্চিমে দেখা দিয়েছেন শ্বেত শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা। কিন্তু … এত ম্লান কেন? অভিমান হলো নাকি! পূবদিকে শুক্রদেব তার ঘরে ফেরার পথে পা বাড়িয়েছেন। আর তখন আকাশের অন্ধকার কে ভেদ করে শুরু হয়েছে লাল,সাদা কমলা নানা রঙের হোলি খেলা। হোলির রঙে রেঙে উঠছে দিক থেকে দীগন্ত । আকাশও নিজেকে রাখতে পারছে না বঞ্চিত। কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘা ? তার স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে শ্বেত বস্ত্রে নিজেকে পরিপাটি করে মেলে ধরছে খুব সন্তর্পনে ধীরে ধীরে, যেন নিঃশব্দে কাউকে অনেক কিছু বলছে যা আমাদের শোনার বা বোঝার ঊর্ধ্বে । এই অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে হারিয়ে গেছি কখন... ঠিক তখনই মেঘবালিকা ঢেকে দিল আকাশ বাতাস সকলের প্রিয় কাঞ্চনজঙ্ঘাকেও।
বিভরতা ভেঙে বাস্তবে ফিরতেই হাসলাম নিজের মনে। অনুভবে যেন রাধাকৃষ্ণের হোলি খেলা। গোপিনীরা যতই রং দিক কৃষ্ণের গায়ে একবিন্দুও রং লাগছে না। রাধা যতক্ষন না কৃষ্ণকে নিজ হাতে রাঙিয়ে দিচ্ছে কৃষ্ণের হোলি সম্পন্ন হবে না ততক্ষন। কাঞ্চনজঙ্ঘা ও যেন বলতে চাইছে তোমরা যতই রেঙে ওঠো আমি সূর্যকে ছাড়া রঙের আঙ্গিনায় নিজেকে রাঙাবো না। কাঞ্চনজঙ্ঘা আর সূর্য্যের পার্থিব পরকীয়া প্রেম বিভোর করলো আমাকে। ঠিকই তো কেন তাদের প্রেম রোজ রোজ মেলে ধরবে সবার মাঝে। তাই তো মেঘবালিকা আদর করে পর্দা টেনে দিয়েছে।
মনে হলো কাঞ্চনজঙ্ঘা বুঝতে পারলো আমার মনের কথা, তাই মেঘের চাদর সরিয়ে দেখা দিল নতুন সাজে । ভোরের স্নান সেরে রক্তিম আভায় পরিপূর্ণ সলজ্জ রূপে । কি অপরূপ তুমি। ওদিকে পুব আকাশে উঁকি মারলেন সূয্যি বাবু। যেন দেখতে চাইছে কাঞ্চনজঙ্ঘার ঘুম ভাঙল কিনা। মনে হলো ,কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ দেখে তার পৌরুষে লাগলো। তাই নিজের রূপের শিখা মেলে ধরলো একটুও কাপর্নতা না রেখে। নিজেকে অপরুপ সাজে সাজাল। ভুলে গেল পূর্ব স্মৃতি। এই রূপের জন্যই একদিন বিপদে পড়েছিল পবন পুত্র হনুমানের কাছে । কিন্তু এখানেও যেন পৌরুষত্বের লড়াই। তাই নিজের রূপের ছটা বাড়িয়ে আকাশের বুক চিরে উদিত হতে লাগলেন সূয্যি বাবু। কাঞ্চনজঙ্ঘাও মুচকি হেসে নিজেকে গলানো সোনা দিয়ে একটু একটু করে স্বর্ণালংকারে ভূষিত করতে লাগলো স্বজত্নে , স্বমহিমায় । কি তার রূপ ! তার ভাষা আমার জানা নেই। কি দেখছি ?কোথায় আছি? এএও কিইই সম্ভব,!! কাকে ছেড়ে কাকে দেখবো?
মিষ্টি- মধুর ,রাগ -অনুরাগের খেলা চলতে চলতে হঠাৎ সূর্য তার সমস্ত সৌন্দর্যের ছটায় কাঞ্চনজঙ্ঘাকে রূপের ঝর্ণায় স্নান করিয়ে দিয়ে পুব আকাশে সম্পূর্ণ অন্য রূপে বিরাজমান হলেন যেন এই বলে, ‘আজ তবে থাক প্রিয় কাল আবার খেলবো হোলি '। কাঞ্চনজঙ্ঘাও তার অহংকারী স্বর্ণভূষণ ছেড়ে ফিরে এলো চিরপরিচিত শ্বেতশুভ্র রূপে, স্বমহিমায়। আমরা এই কাঞ্চনজঙ্ঘাকেই চিনি জানি ভালোবাসি ।লজ্জা নেই ,আড়ষ্টতা নেই ,দৃঢ় সপ্রতিভ সার্থক তোমাদের প্রেম । তোমরা একে অন্যের পরিপূরক। তোমাদের যুগযুগান্তরের প্রেম চলতে থাকুক যুগ যুগান্তর ধরেই । আমরা দুচোখ ভোরে তাকে দেখি , অনুভব করি নিজেদের সার্থক করে তুলি। ভালো থেকো দুজোনায়।।
দু চোখ দিয়ে অঝোরে ঝরছে জল । কেন - জানিনা। ভালোলাগা, ভালোবাসা, নাকি অন্য কিছু!? আমরা প্রেমকে উপভোগ করি। পরকীয়ার নিন্দা করি।কিন্তু তোমাদের চির সার্থক এই প্রেম অনুভবের উপলব্ধিতে রসনাতৃপ্ত করি।
সত্যি আমরা “ বিধাতার বাঁকা হাসির বিদ্রূপ ”
আমার প্রেমের অনুভূতিতে মিশে গেল-----
“একি লাবণ্যে পূর্ন প্রাণ প্রাণেশ হে….
আনন্দ বসন্ত সমাগমে।
বিকশিত প্রীতি কুসুম হে ……
পুলকিতচিত ফাগুনে...।।”’
এই কারণে তুমি সব সময় সব খানে রবিঠাকুর।।
রবিঠাকুর বারবার ছুটে এসেছেন কেন, কি কারণে? এই প্রেমলীলার সাক্ষী হবেন বলে।আর খুঁজে পেতে চেয়েছেন কাঞ্চনজঙ্ঘার মধ্যে দিয়ে তার চিত্রাঙ্গদাকে। জানা নেই। শুধু বিশ্বাস করি উনি দেখতে পেলে হয়তো সূর্যের কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রকৃত প্রেমের ভাষা পেতো।
আর কি ,মন ভাল না খারাপ কি জানি ঠিক ব্যাখ্যা নেই আমার কাছে , স্বল্প শিক্ষিত মানুষ গদ্য, পদ্য ,কাব্য কিছুই আসেনা তাই ভাবাবেগ কাকে বলে জানি না । আর সেই কারণেই হয়তো এত রূপের আবেশ না কাটা স্বত্তেও বেড়িয়ে পড়লাম দার্জিলিং সফর করতে। বাতাসিয়া লুপ , ঘুম মনেস্ট্রি, মহাকাল মন্দির আবার দার্জিলিং ম্যাল এবং মার্কেটিং।।টয়ট্রেন এর টিকিট কাটা হলেও শেষ অবধি হয়নি সেদিন ট্রেনের ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যায় অগত্যা টাকা ফেরত। তাই এবার গাড়ি বুক করে বেরিয়ে পরা কোনো ডেস্টিনি ছাড়াই।
পরের দিন পশুপতি মার্কেট আর মিরিক। পশুপতি মার্কেটে প্রায় সব নকল জিনিষ আর আমাদের সকলের পাড়ায় যত দোকান থাকে তার থেকেও কম দোকান, তাই পশুপতি ছেড়ে এবার মিরিক। মিষ্টি সুন্দর জায়গা, চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা চা বাগান। মিরিক এর প্রধান আকর্ষণ লেক, সুন্দর শান্ত পরিবেশ। চারিদিকের গাছপালা আর পাহাড় ঘিরে রেখেছে লেকটিকে । লেকের পাস দিয়ে গাছ পালায় ঘেরা রাস্তা দিয়ে ঘোড়া করে ঘুরতে বেশ লাগে, এগুলো অবশ্যই ঘোড়া । দার্জিলিং ম্যালের মতন দেখতে ঘোড়ার মতন ঘোড়া নয়।
এখানেই দুপুরের খাবার খেয়ে আর কিছু কেনাকাটা করে নিউজলপাইগুড়ি স্টেশন। দার্জিলিং মেল।
টাটা দার্জিলিং। তোমায় মনে রাখার দরকার পড়বে না তুমি মনে থেকে যাবে । আমি জানি তোমার থেকে অনেক বড় পাহাড় পর্বতের ডালি নিয়ে প্রকৃতি সাজিয়ে রেখেছে থরে থরে কিন্তু তুমি সর্বোত্তম সুন্দরী কারণ তুমি প্রেম ।। তুমি ঈর্ষা মোহ রাগ নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ,দেওয়া নেওয়া পরকাষ্ঠে নিজেকে আবৃত না রেখে বৃন্দাবনের মতন রহস্যময় প্রেম কথা না গেথে নিজেদের প্রেম মেলে ধরেছ সবার কাছে, তাকে ভোলা যায়না শুধু ভালোবাসা যায় , মনে থেকেই যায়।।
No comments